প্রকাশের সময় 07/10/2024
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে হত্যা মামলার আসামি যুবলীগ ক্যাডার সাব্বির আহম্মেদ প্রধান (৪৮) কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রবিবার (৬ অক্টোবর) ভোর রাতে অভিযান চালিয়ে নাসিক ৬নং ওয়ার্ডের গোদনাইল বার্মাশীল এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত সাব্বির আহম্মেদ প্রধান গোদনাইল বার্মাশীল এলাকার মৃত হাসান আলী প্রধানের ছেলে।
এদিকে সাব্বিরকে গ্রেপ্তারের পর নারায়ণগঞ্জ মহানগর মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক আয়শা আক্তার দিনা তাকে ছাড়িয়ে নিতে থানায় ছুটে আসেন বলে জানায় একাধিক সূত্র। তবে ৩/৪ ঘন্টার মত থানায় অবস্থান করলেও শেষে ব্যার্থ হয়ে ফিরে যান আয়শা আক্তার দিনা।
বিষয়টি জানাজানি হলে আয়শা আক্তার দিনার এহেন কর্মকান্ডে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। সিদ্ধিরগঞ্জের বিএনপি দলীয় নেতাকর্মীরা এ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা করেন। তারা দলের মধ্যে লেজুর ভিত্তিক নেতাকর্মীদের সংস্কারের দাবি জানান।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল মামুন গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন দুপুরে গ্রেপ্তারকৃত আসামি সাব্বির আহম্মেদ প্রধানকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় স্কুল ছাত্র আরাফাত হোসেন আকাশ হত্যাকান্ডের মামলায় আদালতে পাঠানো হয়েছে। মামলা নং- (২৯) ২২-০৯-২৪।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় ২১ জুলাই সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মোড়ে খানকায়ে জামে মসজিদ সংলগ্ন হক সুপার মার্কেটের সামনে স্কুল ছাত্র আরাফাত হোসেন আকাশ (১৬) তার বাবা আকরামের সাথে ফল বিক্রিতে সহায়তা করছিল। ওই দিন সকাল ১১ টায় মামলার আসামিরা ছাত্রদের আন্দোলন ঠেকাতে গুলি বর্ষণ করে। এতে আকাশ গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। নিহত আরাফাত হোসেন আকাশ নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ী উপজেলার ওয়াসেকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেনীর ছাত্র ছিলো।
এদিকে সাব্বির আহমেদকে গ্রেপ্তারের পর মূখ খুলতে শুরু করেছে এলাকাবাসী। তারা জানায়, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুলীগের যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক সাব্বির আহমেদ সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুব লীগের আহব্বায়ক ও ৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতির একজন আস্থাভাজন কর্মী। মতির সকল কুকর্মের সাথে সাব্বির জড়িত ছিল। সাব্বিরের বাসা গোদনাইলে অবস্থিত পদ্মা ও মেঘনা জ্বালানি ডিপোর কাছে থাকায় মতির শেল্টারে চোরাই তেলের ব্যবসা নিয়ন্ত্রন করত।
৭নং ওয়ার্ডে অবস্থিত আদমজীনগর এম ডব্লিউ উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ছিল মতি। এ সময় সাব্বির ওই কমিটির সদস্য হয়ে নানা অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও লুটপাটে জড়িয়ে পড়ে। তার স্ত্রী লিপি আক্তার ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। সাব্বির নিয়মনীতি উপেক্ষা করে অনিয়মের মাধ্যমে তার স্ত্রী লিপি আক্তারকে বিদ্যালয়ের প্রভাতী শাখায় ভারপ্রাপ্ত সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ দেয়।
গত ৪ বছর যাবৎ আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে ষড়যন্ত্র করে এমনকি শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গাজী নাজমুল হুদাকে বিদ্যালয়ের দায়িত্ব থেকে দূরে সরিয়ে রাখার মূল কারিগরও সাব্বির। ৫ আগষ্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সাব্বির অনৈতিক পন্থায় নারায়ণগঞ্জ মহানগর মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক ও নাসিকের সাবেক সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর আয়েশা আক্তার দিনাকে ম্যানেজ করে তাকে সামনে ঠেলে দিয়ে নেপথ্যে থেকে সে তার এসব কর্মকান্ড অব্যাহত রেখেছে।
বার্মাশীল এলাকার বাসিন্দারা জানায়, র্দীর্ঘ দিন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাতে সাব্বির মতির সাথে নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে। গোদনাইল কবরস্থানের জন্য ৬ নং ও ৮ নং ওয়ার্ড থেকে এলাকাবাসী বাৎসরিক চাঁদা দিত। সেই টাকা কবরস্থানের উন্নয়নে না দিয়ে সাব্বির নিজেই আত্মসাৎ করছে। মতি এলাকা থেকে পালিয়ে গেলেও সাব্বির দিনার শেল্টারে এলাকায় থেকে যায়। এলাকায় থেকে বিএনপির স্থানীয় কর্মীদের সাথে থেকে মতির ব্যবসা বাণিজ্য ও অবৈধ অর্থের উৎস পরিচালনা করে আসছে। এতে করে সে অল্প দিনেই প্রচুর টাকা হাতিয়ে নেয়।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক আয়শা আক্তার দিনার কাছে এসব বিষয়ে জানতে তার মোবাইলে রবিবার রাত সোয়া ৮টার দিকে একাধিবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।তবে সকালে থানায় উপস্থিত গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন গ্রেপ্তারকৃত সাব্বিরের আত্মীয় তিনি।