প্রকাশের সময় 10/03/2025
নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার তিনগাঁও এলাকার বাসিন্দা মো. হাসিব (২৬)। পূর্বে অন্য পেশায় থাকলেও ব্যবসা করার মনমানসিকতা থেকে শুরু করেন মাশরুম চাষ।
ব্যবসা করে স্বাবলম্বী হতে প্রথমে শুরু করেন কোয়েল পাখি, হাঁস ও কবুতরের খামার। পরে শুরু করেন শাকসবজি চাষাবাদ কোনোটিতে সফল হতে পারেনি তিনি।
সবশেষ ২০২০ সালের শুরু করেন মাশরুম চাষ। এরপর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। মাশরুম চাষে ভাগ্য বদল করে হাসিব এখন আর্থিক স্বাবলম্বী।
কঠোর পরিশ্রম ও প্রবল আত্মবিশ্বাস থেকে বছর খানেকের মধ্যে লাভের মুখ দেখতে পান তিনি। বর্তমানে বড় পরিসরে করছেন মাশরুমের চাষা। পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে মাশরুম বিক্রি করছেন। তার বাৎসরিক ৭-৮ লাখ টাকা আয় হচ্ছে বলে জানান তিনি।
সরেজমিন ঘুরে দেখা ও যানা গেছে , হাসিবের নিজস্ব জায়গা জমি নেই। স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে দুই কক্ষের একটি টিনশেড ভাড়া বাড়িতে বসবাস করেন। এক কক্ষে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে থাকেন,অন্যটিকে বানিয়েছেন মাশরুম চাষের ল্যাবরেটরি কক্ষ।
এখানেই তিনি মাশরুমের স্পন (বীজ) উৎপাদন করেন। আর দুটি কক্ষ ব্যবহার করা হয় মাশরুম উৎপাদনের জন্য।
মো. হাসিব সময়ের কন্ঠস্বর কে জানান, ২০২০ সালের থেকে মাশরুম চাষ শুরু করি। অনেক আগে থেকেই আমার টার্গেট ছিল কোনো ব্যবসা করবো।
চিন্তা করলাম মাশরুম নিয়ে কিছু করা যায় কিনা। আমার এক বন্ধু পরামর্শ দেয় মাশরুম চাষ করার জন্য।
সাভারের মাশরুম উন্নয়ন ইন্সটিটিউট থেকে মাশরুমের স্পন কিনে নিয়ে আসি। তখন মাশরুম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারি মানব দেহের জন্য মাশরুম খুবই উপকারী।
আমার জানামতে, আগামীতে মাশরুম চাষ করে অনেকেই বেকারত্ব দূর করবে বাংলাদেশ। মাশরুম চাষ করে আমার যে অর্থ খরচ হয় তার চেয়ে দ্বিগুণ উপার্জন করা সম্ভব হয় এখন।
তিনি বলেন, আমার ফার্মটিতে প্রতি মাসে ২০০-২৫০ কেজি মাশরুম উৎপাদন হয়। আর এসব মাশরুম পাইকারিতে ২০০-২৫০ টাকা এবং খুচরাতে ৩০০-৪০০ টাকায় বিক্রি করে থাকি। তবে মৌসুমভেদে দাম কমবেশি হয়ে থাকে। শীতকালে মাশরুম উৎপাদন বেশি হয়ে থাকায় তখন তুলনামূলক কমে মাশরুম বিক্রি করা হয়। মাশরুম চাষ করে আমার বাৎসরিক আয় প্রায় ৭-৮ লাখ টাকা। আর বাৎসরিক খরচ সর্বোচ্চ আড়াই থেকে ৩ লাখ টাকা খরচ হয়ে থাকে।
হাসিব আরো বলেন, প্রতিনিয়ত মাশরুমের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় আমার মাশরুম বিক্রি করতেও হিমশিম খেতে হয়। শুরুতে আশপাশের এলাকার বাড়ি ঘরে মাশরুম বিক্রি করলেও এখন দূর দূরান্ত থেকে মানুষ আমার এখান থেকে মাশরুম কিনে নিয়ে যায়। এ ব্যবসা শুরু করার পূর্বে অনেকেই আমার ব্যাবসায়িক পার্টনার হতে চেয়েছিল কিন্তু আমি কাউকে গ্রহণ করিনি। কারণ, আমি তখন সন্দিহান ছিলাম মাশরুমে চাষ করে লাভবান হতে পারবো কিনা। মাশরুম চাষের আগে কোয়েল পাখি, হাঁস, কবুতরের খামার, শাকসবজি চাষাবাদ এগুলো দিয়ে ব্যবসা শুরু করেছিলাম। কিন্তু কোনোটিতেই সফল হইনি। তখন আমার কয়েকজন ব্যবসায়িক পার্টনার ছিল। তাই মাশরুম চাষ একাই শুরু করি।
পরিবার থেকে সমর্থন পাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, পরিবার থেকে সমর্থন না পেলে মাশরুম চাষাবাদ করে এতদূর আসা হতো না। আমার স্ত্রী ও সন্তানরা আমাকে কাজে খুবই সাহায্য করে থাকে।
মাশরুম নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে হাসিব বলেন, আগামীতে আরও বড় পরিসরে মাশরুম চাষ করবো। বিভিন্ন জাতের মাশরুম নিয়ে কাজ করবো। মাশরুমকে ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল অবস্থায় নিয়ে যেতে চাই। আমার স্বপ্ন বাস্তবায়নে সরকার এগিয়ে আসবে সেই প্রত্যাশাই করি।
হাসিবের স্ত্রী সাদিয়া আক্তার বলেন, মাশরুম চাষ আমার কাছে খুবই ভালো লাগে। আমার স্বামীর কাছ থেকে মাশরুম চাষ করা শিখেছি। আমি তাকে সহযোগিতা করি। প্রথমে স্পন কিনে নিয়ে এসে মাশরুম চাষ করি। এখন নিজেরাই স্পন উৎপাদন করে মাশরুম উৎপাদন করছি। এই মাশরুম আমরা নিজেরাও খাবার তালিকায় রেখেছি। অন্যকেও খাবার তালিকায় রাখতে উৎসাহিত করছি। এটি স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো।
এ বিষয়ে বন্দর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তাসলিমা আক্তার বলেন, সাভারের মাশরুম উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে প্রকল্পের অধীনে একটি প্রশিক্ষণ হয়ে থাকে। হাসিব সাহেবকে ওইখানে ১৫ দিনের আবাসিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তাকে এ পর্যন্ত ২ লাখ ৯৫ হাজার টাকা আর্থিক অনুদান দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, মাশরুম উৎপাদনের জন্য আমরা দুটি ঘর তৈরি করে দিয়েছি। এছাড়া একজন মাশরুম উদ্যোক্তার যা যা প্রয়োজন তাকে তা দেওয়া হয়েছে। এই ধারাবাহিকতায় আগামীতেও মাশরুম চাষি হাসিবকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।