প্রকাশের সময় 23/08/2024
নওগাঁর পত্নীতলায় গগনপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে আইসিটি বিষয়ের শিক্ষক মোসা: সুরাতুন জান্নাত এর বিরুদ্ধে জাল সনদে চাকরি করার অভিযোগ উঠেছে। তিনি এই সনদ দিয়ে নিয়োগ নেওয়ার পর দীর্ঘ্য ২২ বছর থেকে সরকারি কোষাগার থেকে বেতন-ভাতা উত্তোলন করে যাচ্ছেন। এ পর্যন্ত তিনি প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা সরকারি কোষাগার থেকে উত্তোলন করেছেন। এবিষয়ে গত বছরের ১৪ মে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর ( মঊশি ) মহাপরিচালক, আঞ্চলিক শিক্ষা কর্মকর্তা রাজশাহী, জেলা শিক্ষ কর্মকর্তা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর লিখিত ভাবে জানালেও এর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, শিক্ষক মোসা: সুরাতুন জান্নাত ২০০১ সালে জাতীয় বহুভাষী সাঁটলিপি প্রশিক্ষণ ও গবেষণা একাডেমী ( নট্রামস ) ধুনট থেকে পাশ করা একটি নিবন্ধন সনদ দিয়ে নিয়োগ নিয়েছেন। অনলাইনে সেই সনদের রোল নাম্বার দিয়ে সার্চ দিলে কোন তথ্য আসেনা। পরবর্তী তে সেই সনদে লিখা বগুড়া ধুনট শাখায় যোগাযোগ করলে এই শাখার কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। পরবর্তীতে প্রতিবেদক স্মরেজমিনে ধুনট বাজারে গিয়ে খোঁজাখুঁজি করার পরে তৎকালীন দুইজন প্রশিক্ষণ সেন্টারের পরিচালকের তথ্য পায়। তথ্য অনুযায়ী তন্দ্রা প্রশিক্ষণ একাডেমী এর পরিচালক তপন কুমার দাস এর সাথে দেখা করলে তিনি জানান, আমি ২০০০ সাল থেকে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ সেন্টার চালু করেছি কখনো ধুনটে এই প্রশিক্ষণ একাডেমীর নাম শুনিনি। অপর একজন প্রশিক্ষক মো: ইউনুস আলী এর কাছ থেকে বিস্তারিত জানতে ধুনট উপজেলার গোসাইবাড়ি বাজারে গেলে তার কোন তথ্য না পাওয়ায় প্রতিবেদক তার গ্রামের বাড়ি মানিকপটল গ্রামে গিয়ে তার সাথে সাক্ষাতে কথা বলে। এসময় প্রশিক্ষণ সেন্টারের পরিচালক মো: ইউনুস আলী জানান,আমি প্রশিক্ষণ সেন্টার চালু করি ১৯৯৭-১৯৯৮ সালে। এই এলাকায় আমিই প্রথম। আমরা যে সনদ দিয়েছি সেখানে জাতীয় বহুভাষী সাঁটলিপি প্রশিক্ষণ ও গবেষণা একাডেমী ( নট্রামস ) লেখার পাশাপাশি আমাদের প্রশিক্ষণ সেন্টারের নাম এবং পুরো ঠিকানা লিখে দিয়েছি। তবে ধুনটে আমার জানা মতে আমরা দুইজন ছাড়া কেউ ছিলোনা। তবে আমি শুনেছি অন্ধকার ঘরে সেই সময় বিনা প্রশিক্ষণে কিছু জাল সনদ মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বিক্রি করা হতো। হতে পারে সেই জাল সনদের মধ্যে এটি একটি।
নিয়োগের সময় দেওয়া সনদের রোল নাম্বার ৫০, রেজিস্টেশন নাম্বার ৫৫, ব্যাচ নাম্বার ৩০, শিক্ষা ব্যাচের সাল ১ লা জানুয়ারী ২০০১ থেকে ৩০ জুন ২০০১ পর্যন্ত। এমপিওতে তার ইনডেক্স নাম্বার ৫৬৭১৭৮
সনদটি ভূয়া জেনেও অভিযুক্ত শিক্ষক মোসা: সুরাতুন জান্নাত দীর্ঘ্যদিন থেকে দাপটের সাথে চাকরী করে আসছেন। যদি কোন শিক্ষক বা সচেতন মহল এই বিষয়ে কথা বলতেন তাহলে তাকে দলীয় আওয়ামীলীগের ক্ষমতা ও তার স্বামী অত্র বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: মোয়াজ্জেম হোসেন এর ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন ধরণের হুমকি ধামকি দিতেন।
এবিষয়ে অভিযুক্ত জাল সনদের মালিক মোসা: সুরাতুন জান্নাত এর দাবি তার সনদটি ভূয়া নয় তবে একটি মহল তার বিরুদ্ধে ঘরযন্ত্র করছে।
প্রতিবেদক তাকে তার কাছ থেকে ব্যাচ নাম্বার, রোল নাম্বার, রেজিস্টেশন নাম্বার, শিক্ষা বর্ষ জানতে চাইলে এর কোন উত্তর দিতে পারেনি।
এবিষয়ে গগনপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও অভিযুক্ত শিক্ষক এর স্বামী মো: মোয়াজ্জেম হোসেন এর কাছ থেকে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনারা এই নিউজটি করেন না । আপনাদের মিষ্টি খাওয়ার চাহিদা আমি পূরণ করছি।
পত্নীতলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোসা: পপি খাতুন বলেন, তদন্ত পূর্বক বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো: লুৎফর রহমানের সাথে মুঠেফোনে কথা বললে তিনি জানান, আমার কাছে এখন পর্যন্ত কোন লিখিত অভিযোগ আসেনি তবে অফিসে যদি থাকে তাহলে অবশ্যই তদন্ত পূর্বক বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।