আজ (১৬ সেপ্টেম্বর) সোমবার হিজরি সনের ১২ রবিউল আউয়াল। পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব, বিশ্বমানবতার মুক্তির দিশারী, মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে মায়ের কোল আলোকিত করে পৃথিবীতে আসেন। রিসালাতের দায়িত্ব পালন শেষে ৬৩২ খ্রিষ্টাব্দের ১১ হিজরি সনের ঠিক এ তারিখেই ৬৩ বছর বয়সে তিনি দুনিয়া থেকে বিদায় নেন।
এজন্য এ দিনটি মুসলিম উম্মাহর কাছে অত্যন্ত পবিত্র ও মহিমান্বিত। বাংলাদেশে দিনটি সরকারিভাবে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) হিসেবে পালিত হয়। এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তিনি বলেন, সত্য ও ন্যায়ের প্রশ্নে হজরত মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন প্রস্তরকঠিন; কিন্তু ক্ষমা ও দয়ায় ছিলেন পানির মতো সরল। তার প্রতিটি কথা ও কর্মই মানবজাতির জন্য অনুকরণীয় ও অনুসরণীয়। বাণী দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসও। বাণীতে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) মানব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে, প্রতিটি ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে বিশ্বমানবতার জন্য অনিন্দ্যসুন্দর অনুসরণীয় শিক্ষা ও আদর্শ রেখে গেছেন, যা প্রতিটি যুগ ও শতাব্দীর মানুষের জন্য মুক্তির দিশারী হিসেবে পথ দেখাবে। ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে যথাযথ মর্যাদায় দিনটি পালনের জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে মহানবীর (সা.) জীবনী আলোচনা, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল। এ উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ইসলামী বইমেলাসহ পক্ষকালব্যাপী বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে। এ ছাড়া পত্রিকা ও টেলিভিশনে অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচারিত হবে। আজ সরকারি-বেসরকারি সব অফিসে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। ঈদে মিলাদুন্নবীর গুরুত্ব ও তাৎপর্য : ঈদ, মিলাদ আর নবী তিনটি শব্দযোগে দিবসটির নামকরণ করা হয়েছে। ঈদ অর্থ আনন্দোৎসব, মিলাদ অর্থ জন্মদিন আর নবী অর্থ ঐশী বার্তাবাহক। ঈদে মিলাদুন্নবীর অর্থ দাঁড়ায় নবীর জন্মদিনের আনন্দোৎসব। ১২ রবিউল আউয়াল একই সঙ্গে মহানবীর (সা.) জন্ম ও মৃত্যু দিবস হলেও তা শুধু জন্মোৎসব হিসেবেই পালিত হয়। পৃথিবীর যে কোনো মানুষের মৃত্যুই তার পরিবার, সমাজ ও দেশের জন্য বিরাট শূন্যতা সৃষ্টি করে; কিন্তু মহানবী হজরত মুহাম্মদের (সা.) মৃত্যু মানবসমাজ ও সভ্যতার কোনো পর্যায়ে কোনো শূন্যতার সৃষ্টি করেনি। তিনি প্রেরিত হয়েছিলেন পুরো পৃথিবীর জন্য আল্লাহর রহমত হিসেবে। এক সময় গোটা আরব অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল।
তারা আল্লাহকে ভুলে গিয়েছিল। তখন মানুষ হানাহানি ও কাটাকাটিতে লিপ্ত ছিল এবং করত মূর্তিপূজা। যাকে আইয়ামে জাহেলিয়াতও বলা হয়। এ অন্ধকার যুগ থেকে মানবকুলের মুক্তিসহ তাদের আলোর পথ দেখাতে মহান আল্লাহ তায়ালা রাসুলুল্লাহকে (সা.) দুনিয়াতে পাঠান। চল্লিশ বছর বয়সে নবুয়ত লাভের পর দীর্ঘ ২৩ বছর মুহাম্মদ (সা.) কঠোর পরিশ্রম ও শত বাধাবিপত্তি মোকাবিলা করে ইসলামের সুমহান আদর্শ প্রচার করে গেছেন। সব ধরনের কুসংস্কার, অন্যায়, অবিচার, পাপাচার ও দাসত্বের শৃঙ্খল ভেঙে মানবসত্তার চিরমুক্তি, শান্তি, প্রগতি ও সামগ্রিক কল্যাণের বার্তা নিয়ে এসেছিলেন তিনি। বিশ্ববাসীকে তিনি মুক্তি ও শান্তির পথে আসার আহ্বান জানিয়ে অন্ধকার যুগের অবসান ঘটিয়েছিলেন এবং সত্যের আলো জ্বালিয়েছেন।
বর্তমান অশান্ত পৃথিবীতে তার দেখানো পথেই আসতে পারে শান্তি ও মানবতার মুক্তি। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনের সুরা আল আম্বিয়ার ১০৭ নম্বর আয়াতে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে বলেছেন, ‘আমি আপনাকে সমগ্র বিশ্বের জন্য রহমত হিসেবে প্রেরণ করেছি।’ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মসূচি: এদিকে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপন উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে পক্ষকালব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে। আজ বাদ মাগরিব বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পূর্ব গেটে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন প্রধান অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করবেন।
ঈদে মিলাদুন্নবীওয়াজ, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, সেমিনার, ইসলামী সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, আরবি খুতবা লিখন প্রতিযোগিতা, কিরাত মাহফিল, হামদ-নাথ, স্বরচিত কবিতা পাঠের মাহফিল, ইসলামী ক্যালিওগ্রাফি প্রদর্শনী, ইসলামী বইমেলা, বিশেষ স্মরণিকা ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ। এ উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সব বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়, ৫৪টি ইসলামিক মিশন এবং আটটি ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমিতে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজনের মধ্য দিয়ে দিনটি পালন করা হবে বলে জানান।
তথ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদনকৃত গণমাধ্যম দৈনিক সকাল প্রতিদিন
কারিগরী সহায়তায় তাইপুর রহমান তপু।