প্রকাশের সময় 17/02/2025
মাসুদ উল হাসান ॥ বকশীগঞ্জ উপজেলা ও পৌর বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন সফল করতে আনন্দ মিছিল করেছে উপজেলা বিএনপি ও সহযোগী অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। সোমবার বিকাল ৫ টার দিকে উপজেলা বিএনপির আহবায়ক মানিক সওদাগরের নেতৃত্বে বিএনপির দলীয় কার্যালয় থেকে একটি মিছিল বের হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে বটতলা মোড়ে পথসভা করেন তারা। এর আগে বিকাল চারটার দিকে তৃতীয় দিনের মতো উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুর রউফ তালুকদারের নেতৃত্বে সম্মেলন প্রতিহত করতে একটি মিছিল বের করা হয়। উপজেলা ও পৌর বিএনপির ত্যাগী ও পদবঞ্চিত নেতাকর্মীর ব্যনারে মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিন করে মধ্যবাজারে প্রতিবাদ সভা করেন। ফলে সম্মেলন ঘিরে দুপক্ষের মধ্যে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। শহরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। জানা যায়,গত ২০২০ সালের ২৪ নভেম্বর বকশীগঞ্জ উপজেলা ও পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেন জেলা বিএনপি। ৯৯ সদস্য বিশিষ্ট উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটিতে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মানিক সওদাগরকে আহ্বায়ক ও সাবেক ভিপি ফখরুজ্জামান মতিনকে সদস্য সচিব করা হয়। এ ছাড়া উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জাহিদুল ইসলাম প্রিন্সকে আহ্বায়ক ও অ্যাডভোকেট আনিছুজ্জামান গামাকে সদস্য সচিব করে ৭৩ সদস্য বিশিষ্ট পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়। দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে বকশীগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হন সদস্য সচিব ফখরুজ্জামান মতিন। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ২০২৪ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি তাকে বহিস্কার করা হয়। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তাকে দলের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সকল পদ থেকেও বহিস্কার করা হয়। মেয়র পদে নির্বাচিত হলেও ফখরুজ্জামান মতিনের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়নি। দীর্ঘ ৪ বছর পর আগামীকাল ১৮ ফেব্রুয়ারী সকাল ১১ টায় বকশীগঞ্জ উপজেলা ও পৌর বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। বকশীগঞ্জ খয়ের উদ্দিন মাদ্রাসা মাঠে অনুষ্ঠিতব্য সম্মেলন উদ্বোধন করবেন জামালপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফরিদুল কবির তালুকদার শামীম। প্রধান অতিথি বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন-নবী খান সোহেল। প্রধান বক্তা বিএনপির কোষাধ্যক্ষ সাবেক এমপি এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত। উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মানিক সওদাগরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে বিশেষ বক্তা বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ময়মনসিংহ বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. শরিফুল আলম। বিশেষ অতিথি ময়মনসিংহ বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহ মো. ওয়ারেছ আলী মামুন এবং বিএনপির ময়মনসিংহ বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবু ওয়াহাব আকন্দ। সম্মেলন সফল করতে প্রতিটি ইউনিয়নে প্রস্তুতি সভাসহ ব্যাপক প্রচারনা চালায় বিএনপি। কে হচ্ছেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এই নিয়ে বেশ কয়েকদিন ধরে চলছে আলোচনা। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে বর্তমান ও সাবেক কমিটির নেতাদের নিয়ে সমঝোতার জন্য ঢাকায় একাধিক বৈঠক হয়। বৈঠকে নেতৃত্ব দেন সাবেক এমপি এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত। একটি সূত্র জানায়,কোন পক্ষই কাউকে ছাড় দিতে নারাজ,তাই সিদ্ধান্তে পৌঁছা সম্ভব হয়নি। তবে বৈঠকের বিশ্বস্ত একটি সূত্র জানায় মানিক সওদাগরকে সভাপতি ও জাহিদুল ইসলাম প্রিন্সকে সাধারণ সম্পাদক করার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে এ বিষয়ে দায়িত্বশীল নেতারা মুখ খুলতে নারাজ,তাদের দাবি সম্মেলন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। সম্মেলন সফল করতে প্রতিটি ইউনিয়নে প্রস্তুতি সভাসহ ব্যপক প্রস্তুতি গ্রহন করেছে উপজেলা বিএনপি। ব্যানার ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে পুরো শহর। প্রতিদিনই আনন্দ মিছিল করছে দলটির নেতাকর্মীরা। তাদের দাবি অত্যান্ত জাকঁজমকপূর্ন ভাবে অনুষ্ঠিত হবে এবারের সম্মেলন। সোমবার আনন্দ মিছিল শেষে বটতলা মোড়ে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন উপজেলা বিএনপির বিএনপির আহবায়ক আলহাজ্ব মানিক সওদাগর,পৌর বিএনপির আহবায়ক জাহিদুল ইসলাম প্রিন্স,সদস্য সচিব এডভোকেট আনিছুজ্জামান গামা,উপজেলা যুবদলের আহবায়ক বিপ্লব সওদাগর,সদস্য সচিব লাভলু,পৌর যুবদলের আহবায়ক সাইফুল ইসলাম শাকিল তালুকদার,সদস্য সচিব তানজির আহমেদ সুজন,উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক আশিকুর রহমান তোলন ও সদস্য সচিব শহিদুল হক দুলাল প্রমূখ। অপরদিকে ত্যাগীদের বাদ দিয়ে সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে দাবি করে সম্মেলন স্থগিতের দাবি জানিয়ে আসছেন পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা। স্থগিত না করলে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়ে গত তিনদিন যাবত বিক্ষোভ সমাবেশ করছেন তারা। বিক্ষোভ সমাবেশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবদুর রউফ তালুকদার। যে কোন মূল্যে সম্মেলনকে প্রতিহত করার ঘোষনা দিয়ে সোমবার প্রতিবাদ সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বকশীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফরিদ উদ্দীন,উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব আবদুল কাইয়ুম,উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক নুরুল ইসলাম বাদশাহ,পৌর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক শহিদুল্লাহ,উপজেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি ও সাবেক ভিপি হাফিজুর রহমান উজ্জল,উপজেলা শ্রমিকদলের সভাপতি কায়ছার আমীন, সাধারণ সম্পাদক শহিদুর রহমান লাভলু,উপজেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক রকিবুল হাসান বাবুল,পৌর বিএনপির সাবেক আহবায়ক হাফিজুর রহমান ফিরোজ,সাবেক সদস্য সচিব আবদুল্লাহ আল সাফী লিপন,যুগ্ম আহবায়ক আল আমিন বিদ্যুৎ,উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সদস্য সচিব গোলাম রব্বানী বাণী ও উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি সরকার রাসেল প্রমূখ। জানতে চাইলে বকশীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব আবদুল কাইয়ুম বলেন,ফেসিস্ট সরকারের শাসনামলে যারা আওয়ামীলীগে যোগদান করেছিল,যারা আতাত করে চলেছে তাদের দিয়ে সম্মেলন সফল হতে পারে না। তৃনমূল বিএনপিকে প্রধান্য দিয়ে কমিটি করতে হবে। তাই সম্মেলন স্থগিতের দাবি জানিয়েছি। স্থগিত করা না হলে প্রতিহত করতে তৃনমূল বিএনপির নেতাকর্মীরা মাঠে থাকবে বলে জানান তিনি। বকশীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবদুর রউফ তালুকদার বলেন,কাউন্সিলের মাধ্যমে ইউনিয়ন কমিটি ওয়ার্ড কমিটি করার কথা থাকলেও তা হয়নি। হয়েছে পকেট কমিটি। ফলে ত্যাগীরা দলে স্থান পায়নি। সম্মেলনে ত্যাগীদের মূল্যায়ন করতে হবে। তৃনমূলে অগ্রহনযোগ্য ব্যাক্তিদের দিয়ে কমিটি হলে দল ক্ষতিগ্রস্থ হবে। তাই ১৮ তারিখের সম্মেলন স্থগিত করে তৃনমূলকে প্রধান্য দিয়ে কমিটি করার দাবিতে নেতাকর্মীরা মাঠে নেমেছে। হয় স্থগিত না হয় প্রতিহত। দলীয় নেতাকর্মীদের সেভাবেই মাঠে থাকতে বলা হয়েছে। বকশীগঞ্জ পৌর বিএনপির আহবায়ক জাহিদুল ইসলাম প্রিন্স বলেন,বিএনপির কোষধ্যক্ষ জননন্দিত জননেতা এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত ভাইয়ের দিক নির্দেশনায় ১৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সেই লক্ষে সকল ধরনের প্রস্ততি সম্পন্ন হয়েছে। যারা স্থগিতের দাবি জানিয়েছে দলের দু:সময়ে তারা কি করেছে, তাদের চরিত্র কি তাদের সম্পর্কে বিএনপির সকল নেতাকর্মীদের ধারনা রয়েছে। তাই ষড়যন্ত্র করে তারা কখনো সফল হবে না। সম্মেলনকে ঘিরে কোন ঘৃন্য চক্রান্ত করার চেষ্টা করা হলে কঠোর হস্তে প্রতিহত করা হবে বলে হুশিয়ারি দেন তিনি। বকশীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহবায়ক মানিক সওদাগর বলেন,দলের দুর্দীনে যাদের পাশে পাওয়া যায়নি তারা আজ ত্যাগি সেজেছে। সম্মেলন বানচাল করতে নানা ভাবে ষড়যন্ত্র করছে। তবে যারা জেল জুলুম নির্যাতন সহ্য করে বিএনপি করেছে সে সকল নেতাকর্মীরাই সম্মেলন সফল করবে। বিএনপির সম্মেলন প্রতিহত করার সাধ্য কারো নেই। কারন তৃনমূল বিএনপি মুল ধারার সাথে রয়েছে। সম্মেলন সফল করতে সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে জানিয়ে তিনি আরো বলেন,সম্মেলন নিয়ে যে নোংড়ামি করতেছেন তা মানুষ বুঝে গেছে। মনে রাখবেন ষড়যন্ত্র করে কেউ কোনদিন সফল হয়নি,আপনারাও হবেন না। সঠিক সময়ে সঠিক জবার দেয়া হবে ইনশাআল্লাহ। বকশীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার শাকের আহমেদ বলেন,বিএনপির সম্মেলনকে কেন্দ্র করে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে তৎপর রয়েছে পুলিশ। শহরের গুরুত্বপূর্ন পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। তাছাড়া একটি টহল টিম সারাক্ষন মাঠে কাজ করছে।