প্রকাশের সময় 07/09/2024
নাগরিক সাংবাদিক মোঃ খায়রুল আলম রফিক। গত ১৬ বছর ধরে ঢাকাসহ সারাদেশে কাজ করছেন। তিনি বলেন, ঢাকার তুলনায় মফস্বলের সাংবাদিকতা তার কাছে বেশ ঝুঁকিপূর্ণ বলেই মনে হয়। মফস্বলের প্রত্যেকটা সাংবাদিক পরিচিত। সবাই সবাইকে চেনে। ওখানে কোন সংবাদ হলে তাকে টার্গেট করা সহজ। ঢাকায় সেটা সম্ভব না। মফস্বলের সাংবাদিক প্রতি মুহুর্তে, প্রতিদিনই ঝুঁকির মধ্যে থাকে। চোরাকারবারি, মাদক ব্যবসায়ী, আমলাদের দুর্নীতি এবং রাজনীতিবিদরা বিভিন্ন সময় মফস্বল সাংবাদিকদের প্রতিপক্ষ হয়ে উঠে। খায়রুল আলম রফিক বলেন, ” কিছু বড় পত্রিকা আছে যারা সাংবাদিকরা সমস্যায় পড়লে পত্রিকা কর্তৃপক্ষ দেখে। মামলায় পড়লে কর্তৃপক্ষ সেটা দেখে এবং সহযোগিতা করে। কিন্তু আমরা দেখেছি অধিকাংশ পত্রিকা কোন সহযোগিতা করেনা। এর সমস্যা নিজেই সামলাতে হয় অনেক সময়।
জেলা পর্যায়ে যেসব সাংবাদিকরা কাজ করছেন, তাদের অনেকেরই প্রতিষ্ঠানের তরফ থেকে কোন নিয়োগপত্র নেই । অভিযোগ রয়েছে, অধিকাংশ সংবাদমাধ্যম জেলা প্রতিনিধিদের কোনও মাসিক বেতন দেয় না। তিনি বলেন, অনেক জায়গায় রাজনৈতিক মতাদর্শকে কেন্দ্র করে সাংবাদিকদের মাঝেও রয়েছে তীব্র বিভেদ। অনেক জেলা উপজেলায় আছে এমন কান্ড। বেশিভাগ অনুসন্ধানী রিপোর্ট করলে প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠে কিছু দালাল নামের সাংবাদিক। তারাই হয় আপনার শত্রু। মফস্বল সাংবাদিকদের অনেকেই বলছেন এসব কারণে অনেক সাংবাদিক সাংবাদিকতার বাইরেও অন্য ক্ষেত্রে নিজেদের জড়িয়ে ফেলছে। ফলে তার কাজের ঝুঁকিও বাড়ছে।
অনলাইন গনমাধ্যমের অধিকার নিয়ে কাজ করছে বাংলাদেশ অনলাইন সংবাদপত্র সম্পাদক পরিষদ বনেক। নেতারা বলেন, এই যদি পরিস্থিতি হয় তাহলে সাংবাদিকদের সংগঠনগুলো অধিকার রক্ষায় কতটা কাজ করতে পারছে?
বনেকের সাধারন সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আসাদ মনে করেন নানা ‘সীমাবদ্ধতা’ সত্ত্বেও সাংবাদিক ইউনিয়নগুলো সবসময় নির্যাতিত সাংবাদিকদের পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে নিয়োগপত্র এবং মাসিক বেতনের নিশ্চয়তা না থাকলেও খবর পাঠানোর চাপ ঠিকই থাকছে মফস্বল সাংবাদিকদের উপর। ফলে খবরের পেছনে যখন সাংবাদিক ছুটছেন তখন অনেক সময় নিজের নিরাপত্তার দিকে নজর দেবার সুযোগ থাকে না তাদের। পরিস্থিতি মোকাবেলার কোন প্রশিক্ষণও নেই তাদের।
দৈনিক অধিকার সম্পাদক ও বনেকের সিনিয়র সহ-সভাপতি লেখক তাজবীর সজীব মনে করেন, যেসব জায়গায় বা পরিস্থিতিতে সাংবাদিকরা সহিংসতা কিংবা অন্যকোন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পড়তে পারেন, সেসব জায়গায় সাংবাদিকদের নিজস্ব কিছু প্রস্তুতি থাকা উচিত। “আমাদের একজন স্থানীয় সাংবাদিক হয়তো লেখার প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন, কিন্তু পরিস্থিতি কীভাবে মোকাবেলা করতে হবে এবং কীভাবে ঝুঁকি এড়িয়ে চলতে হবে, সে প্রশিক্ষণ তার নেই,” বলছিলেন তাজবীর সজীব।সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা খান বলছেন, গত এক দশকে বাংলাদেশে টেলিভিশন, পত্রিকা এবং অনলাইনের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বাড়লেও মফস্বল সাংবাদিকদের স্বার্থ উপেক্ষিতই রয়ে গেছে। শীঘ্রই পরিস্থিতির কোন পরিবর্তন হবে – এমন আশাও করেছন না মফস্বল সাংবাদিকরা।
মোঃ খায়রুল আলম রফিক
সভাপতি, বাংলাদেশ অনলাইন সংবাদপত্র সম্পাদক পরিষদ (বনেক) কেন্দ্রীয় কমিটি।