প্রকাশের সময় 23/02/2025
স্টাফ রিপোর্টার নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার আতলাশপুর এলাকার আব্দুস সামাদ ও তার বাহিনীর সদস্যরা দিন দিন বেপোয়ারা হয়েও উঠেছে। এই বাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে গ্রামের প্রায় পনের হাজার মানুষ । সামাদ বাহিনী এলাকার নিরীহদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, জখম ও মিথ্যা মামলাসহ একের পর এক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে । ভুক্তভোগী ও স্থানীয় এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, আতলাশপুর এলাকার আব্দুস সামাদসহ তার বাহিনী বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর থেকেই নিরীহ গ্রামের লোকজনের উপর হামলা ও মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। এলাকা নিজের নিয়ন্ত্রণে নিতে নিরীহদের বাড়িঘরবো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ হামলা ও মিথ্যা মামলা অব্যাহত রেখেছেন। সামাদ বাহিনীর অন্যতম সদস্য আশিক ভুইয়া, ফেরদৌস, বকুল, নিহাত, জিদান, আশরাফি, রনি, শাহীন মিয়াসহ আরো অনেকে। ভুক্তভোগী মতিউর রহমান জানান, গত ২০ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার সকালে আতলাশপুর এলাকার আবু বক্কর এর মুদি দোকানের ভেতরে ঢুকে সামাদ বাহিনীর সদস্যরা মতিউর রহমানকে এলোপাথারি ভাবে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। বাধা দিতে এগিয়ে গেলে মুদি দোকানদার আবু বক্করকেও পিটিয়ে গুরুতর আহত করে এই বাহিনী। পরে মুদি দোকানে হামলা ভাঙচুর লুটপাট চালায়। এই ঘটনায় মতিউর রহমান বাদী হয়ে রূপগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। আরেক ভুক্তভোগী গিয়াস উদ্দিন অভিযোগ জানান, একই দিন বেলা ১১ টার দিকে সামাদ বাহিনীর সন্ত্রাসীরা তার ছেলে সিফাতকে শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা চালায়। সিফাতকে বাঁচাতে এগিয়ে গেলে সিফাতের চাচা রাজীবকেও এলোপাতাড়ি ভাবে পিটিয়েও কুপিয়ে জখম করা হয়। পরে এ ব্যাপারে কোন প্রকারে থানা পুলিশ করলে হত্যার পর লাশ খুম করার হুমকি দেয় সামাদ বাহিনী সদস্যরা। এ ঘটনায় সিফাতের বাবা গিয়াস উদ্দিন বাদী হয়ে রূপগঞ্জ থানা একটি অভিযোগ দায়ের করেন। আতলাশপুর এলাকার রোবেল ভুইয়া, ফেরদৌস বাড়ী, কাউছার বাড়ী, হাফেজ আমিনুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর আলম, আযাহার ভুইয়া, কবির মোল্লা, বিল্লাল হোসেন মোল্লা, সোহরাব মোল্লা, আলামিন মোল্লা, আলী মিয়া, নুরে আলম ভুইয়া, মনির হোসেন ভুইয়া, কিরণ ভুইয়া, মিজান মিয়াসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ অভিযোগ করে বলেন, ২০২৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বর বালু ভরাটের কাজ নিয়ে সামাদ বাহিনীর সঙ্গে ব্যবসায়ী সেলিম মোল্লা ও তার লোকজনের সংঘর্ষ বাধে। সংঘর্ষের ঘটনায় উভয় পক্ষের অন্তত আটজন আহত হয়। ওই সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িত না থাকলেও পারিবারিক বিষয়াদি নিয়ে পুর্ব শত্রুতা জেরে ব্যবসায়ী কাউছার আহাম্মেদ ভুইয়া ও তার পিতা আওলাদ হোসেন ভুইয়াসহ নিরীহ গ্রামের লোকজনের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে। এতে করে ফুসে উঠে এলাকার সাধারণ মানুষ। জমি সংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে ১৯৯১ সালের ১৯ ডিসেম্বর আতলাশপুর এলাকার কলেজ ছাত্র মোবারক হোসেনকে নৌকা থেকে শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে চুবিয়ে হত্যা করে আব্দুস সামাদসহ তার বাহিনীর সদস্যরা। তখন নিরীহ হওয়ায় মামলা করতে দেয়নি প্রভাবশালী সামাদ বাহিনী। এছাড়া আতলাশপুর এলাকার যুবক আলী নুরকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যার চেষ্টা চালায়। একই এলাকার মকবুল হোসেনের স্ত্রীকে শারিরিক নির্যাতন চালায়। সামাদ বাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে উঠেছে এলাকাবাসী। এলাকার প্রায় পনের হাজার মানুষ সামাদ বাহিনীর কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। আব্দুস সামাদসহ এ বাহিনীর সদস্যদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি ও নিরীহদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করার দাবি জানান ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসী । তানাহলে এলাকাবাসী বড় ধরনের কর্মসুচী পালন করে বলে হুশিয়ারী দেন তারা । গত তিন মাস আগেও সামাদ বাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে এবং আতলাশপুর এলাকার নিরীহ ছাত্র মোবারক হোসেন হত্যাসহ নিরীহ গ্রামবাসীর উপর হামলা, মিথ্যা মামলা দায়ের করার প্রতিবাদে আব্দুস সামাদসহ তার বাহিনীর দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবিতে হাটাবো-আতলাশপুর এলাকার কালাদি-রুপসী সড়কে স্থানীয় কয়েক শতাধীক নারী-পুরুষ মানববন্ধন কর্মসুচীও পালন করেছেন। ওই মানববন্ধনে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী বিক্ষোভ মিছিল করে সামাদ বাহিনীর কুশপত্তিকাদাহ করেন। কিছুদিন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধ থাকলেও ইদানিং আবারও সামাদ বাহিনীর বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তবে, এ ব্যপারে সামাদ বাহিনীর প্রধান আব্দুল সামাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে দাবি করেন। রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লিয়াকত আলী বলেন, আতলাশপুর এলাকার সামাদ বাহিনীর বিরুদ্ধে দুটি অভিযোগ পেয়েছি। এ ব্যাপারে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।