প্রকাশের সময় 09/02/2025
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি দেশের পরিবেশ ও জলবায়ু আন্দোলনের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে হাওরের জেলা সুনামগঞ্জ। রোববার হাউস, ক্লিন, বিডব্লিওজিএডি-এর যৌথ আয়োজনে এক নাগরিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে জলবায়ু কর্মী, শিক্ষার্থী, সাংবাদিক, এবং বিভিন্ন পেশার মানুষ একত্রিত হয়ে “এলএনজি একটি জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী একটি মরণাস্ত্র” ¯শ্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে। জলবায়ু কর্মীরা স্পষ্ট বার্তা দেন, এলএনজি সম্প্রসারণ বন্ধ করতে হবে, কারণ এটি শুধুমাত্র জলবায়ু সংকটকে তীব্রতর করছে না, বরং সাধারণ মানুষকে ভয়াবহ অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত বিরাট ক্ষতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। বাংলাদেশের মতো জলবায়ু-সংকটপ্রবণ দেশে এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) ব্যবহার বাড়ানো আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। বক্তারা বলেন, বিদেশ থেকে আমদানি করা এই ব্যয়বহুল জ্বালানি দেশের অর্থনীতির জন্য এক বিশাল বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের দাম অস্থিরতার মধ্যে চলায় ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে নিম্নআয়ের মানুষজন, যার ফলে সরকারকে বড় অঙ্কের ভর্তুকি দিতে হচ্ছে, অথচ সাধারণ জনগণ পাচ্ছে না সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ। হাউস এর নির্বাহী পরিচালক এর সালেহিন চৌধুরী শুভ বলেন“সরকার কর্পোরেট লোভীদের স্বার্থ রক্ষায় ব্যস্ত অথচ আমরা সাধারণ মানুষ এর মূল্য দিচ্ছি। এলএনজি আমাদের টেকসই জ্বালানির পথে একটি বাধা, এটি কোনো ‘পরিবর্তনকালীন সমাধান’ নয়।” সংগঠকরা আরো বলেন, এলএনজি আসলে একটি জলবায়ু টাইম বোম। এটি পুড়লে কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গত হয়, যা বৈশ্বিক উষ্ণায়নকে ত্বরান্বিত করে। আরও বিপজ্জনক হলো মিথেন গ্যাসের নিঃসরণ, যা কার্বন-ডাই-অক্সাইডের তুলনায় অন্তত ৮০ গুণ বেশি শক্তিশালী গ্রিনহাউস গ্যাস। সুনামগঞ্জ বরাবরই জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবের শিকার। বন্যা, নদীভাঙন, এবং চরম আবহাওয়ার কারণে এখানকার কৃষি, জীবিকা ও জীবনযাত্রা হুমকির মুখে। বক্তারা বলেন, বিদেশ থেকে আমদানি করা এলএনজি প্রকল্পের জন্য কোটি কোটি টাকা ব্যয় করার পরিবর্তে এই অর্থ নবায়নযোগ্য জ্বালানির জন্য ব্যয় করা উচিত। নারী নেত্রী সেলিনা আবেদীন বলেন,“এলএনজি শুধু পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর নয়, এটি আমাদের জন্য একটি অর্থনৈতিক ফাঁদ। আমাদের ভবিষ্যৎ রক্ষা করতে হলে এখনই নবায়নযোগ্য শক্তির দিকে যেতে হবে।” বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে সৌর ও বায়ু বিদ্যুতের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পের মাধ্যমে স্বল্প খরচে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব। যেখানে এলএনজি প্রকল্পে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হচ্ছে, সেখানে এই অর্থ দিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানির অবকাঠামো গড়ে তোলা হলে দেশে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব। এই কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন নুরুল হাসান আতাহের, ফারুক আহমদ, মাহিন চৌধুরী, শিল্পী বেগম, শরীফ আহমদ, ইমরান হোসেন, শাওন আহমদ প্রমুখ সহ স্থানীয় জলবায়ু আন্দোলনের কর্মী, সাংবাদিক, শিক্ষার্থী এবং বিভিন্ন পেশার মানুষ। তারা সবাই একসঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে বলেন, “ দূষণকারী পরে, সাধারণ মানুষ আগে! এই আন্দোলন শুধু সুনামগঞ্জেই নয়, বরং সারাদেশে নবায়নযোগ্য শক্তির পক্ষে জনমত গঠনের অংশ। দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সংগঠন এলএনজি প্রকল্পের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষের দাবী একটাই; এলএনজি সম্প্রসারণ বন্ধ করো, নবায়নযোগ্য শক্তির দিকে এগিয়ে যাও।