প্রকাশের সময় 27/01/2025
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে স্কুলছাত্র আইয়ুব আলী (১৫ ) হত্যা মামলার অভিযুক্ত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা তুলে নিতে বাদী নিহতের মা-আয়েশা ও তার পরিবারের সদস্যদের প্রাননাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এতে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে নিহতের পরিবারের স্বজনরা।
গত শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি ) রাত ১০ টায় উপজেলার কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়নের ইজারকান্দি গ্রামে ঘটে এ ঘটনা।
এ ঘটনায় শনিবার রাতে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন আয়েশা। এতে তিনি নিজের ও তার বড় ছেলে নবীর হোসেনসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের নিরাপত্তা নিয়ে ঝুঁকির বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।
অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, গত শুক্রবার তিনি মেয়ে আদুরী বেগমকে নিয়ে বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। তাঁর অসুস্থ শাশুড়িকে দেখতে রাতে নারায়ণগঞ্জ থেকে বাড়িতে আসেন তাঁর বড় ছেলে নবী হোসেন। খবর পেয়ে ইজারকান্দি গ্রামের বাসিন্দা মামলার অন্যতম আসামি রাসেল মিয়া, জুয়েল মিয়া, শরীফ হোসেন, আল আমিন, আলমগীর হোসেন, ইয়াছিন মিয়া, আবু হানিফা ও অজ্ঞাতপরিচয় ৪-৫ জন রাত ১০টার দিকে তাদের বাড়িতে আসে। তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে নবী হোসেন পেছনের দরজা দিয়ে কোনোরকমে পালিয়ে যায়। কিন্তু আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আসা আসামিরা দরজা ভেঙে ঘরের ভেতর ঢুকে পড়ে। তারা নবী হোসেনের খোঁজে বাড়িতে তাণ্ডব চালিয়ে মামলা তুলে নেওয়ার হুমকি দিয়ে হামলাকারীদের একজন আয়েশাকে বলে, তোর এক ছেলেরে যেমনে খুন করছি, আরেক ছেলেরেও (নবী হোসেন) এমনেই খুন করমু।এমনকি বাড়ির সবাইকে হত্যার হুমকি দেয়। পাশাপাশি এই এলাকা ছেড়ে যাওয়ার জন্যও শাসিয়ে যায় আসামিরা।
সংশ্লিষ্ট এলাকা ঘুরে জানা যায়, কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণিতে পড়ত আয়েশা বেগমের ছোট ছেলে নিহত আইয়ুব আলী। ইজারকান্দি গ্রামের আলোর সেতু পাঠাগারের দেখ বালের দায়িত্বে ছিল সে। ২০২০ সালের ২৭ মে ইজারকান্দি গ্রামের রাসেল,শাহজাহানসহ কয়েকজন মিলে আলোর সেতু পাঠাগার এলাকায় জুয়া খেলার আসর জমায়। এতে বাধা দেন পাঠাগারের দেখ বালের দায়িত্বে থাকা আইয়ুবআলী। এ নিয়ে তর্কাতর্কি ও হাতাহাতি হয়। এদিন সন্ধ্যায় ওই ইউনিয়ন ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি সাদ্দাম হোসেন তার দলবল নিয়ে স্থানীয় আব্দুল হকের বাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় হকের পক্ষ পাল্টা আক্রমণ চালালে সংঘর্ষ বেধে যায়। এ সময় সাদ্দামের পক্ষের ছোড়া গুলিতে নিহত হন স্কুলছাত্র আইয়ুব আলী।
আইয়ুব আলী হত্যার পরদিন আড়াইহাজার থানায় মামলা করেন আয়েশা। এতে ২০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরও ২০ জনকে আসামি করা হয়। মামলাটির প্রধান আসামি ছাত্রলীগ নেতা সাদ্দাম হোসেন এখন সৌদি আরবে পলাতক।
ভুক্তভোগীদের বাড়িতে গেলে এ প্রতিবেদকের কাছে নিহতের পরিবারের স্বজনরা নানা শঙ্কা ও নিরাপত্তাহীনতার কথা জানান।
বর্তমানে হত্যা মামলার আসামিরা উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে এলাকায় রয়েছেন। এরপর থেকেই হত্যা মামলার মাস্টারমাইন্ড সাদ্দাম হোসেন ও রাসেলের নেতৃত্বে আরও কয়েকজন আসামি মামলা তুলে নেওয়ার জন্য নিহতের বড় ভাই, বোন ও তাদের মাকে চাপ দিয়ে যাচ্ছেন। এমনকি তার পাশাপাশি নানা ধরনের অত্যাচার নির্যাতন, ভয়-ভীতি প্রদর্শন ও প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে আসামি পক্ষের লোকজন। এ কারণে মামলার বাদী ও তার পরিবারের লোকজন চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
নিহত আইয়ুব আলীর বৃদ্ধা মা আয়েশে বেগম (৫৮) এখনো শোকে কাতর। ছেলে হারানোর সেই করুণ আর্তনাদ আজও শেষ হয়নি। মরার আগে ছেলের হত্যাকারীদের ফাঁসি দেখে যেতে চান তিনি।
নিহত আইয়ুব আলীর বড় ভাই নবীর হোসেন বলেন, আসামি সাদ্দাম ও রাসেলের নেতৃত্বে আরও কয়েকজন আমাকে ও আমার পরিবারের সদস্যদের নানা রকম হুমকি দিয়ে আসছে। তাদের ভয়ে দীর্ঘদিন ধরে আমি বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। এখন আমি ও আমার পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় আছি। দ্রুত বিচার আইনে ভাই হত্যার বিচার চাই।
আইয়ুব আলীর বোন আদুরী বেগম কান্না জড়িত কণ্ঠে জানান, বাড়িতে আসা-যাওয়ার পথে আসামিরা আমাকেও বিভিন্নভাবে ভয়-ভীতি দেখান।
নিহতের পরিবারকে হুমকি ব্যাপারে হত্যা মামলার আসামি রাসেল, জুয়েল, শরীফ এর বক্তব্য জানতে চেষ্টা করেও কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
স্থানীয় এলাকাবাসী জানিয়েছে, হামলাকারীদের সবাই ছাত্রলীগের সাবেক নেতা সাদ্দাম হোসেনের সহযোগী। সাদ্দাম সৌদি আরব থাকলেও তার এই সহযোগীরা এখনও এলাকায় নানা অপকর্মে জড়িত।
এ বিষয়ে আড়াইহাজার থানার ওসি এনায়েত হোসেন বলেন, হত্যা মামলার বাদীকে আসামিরা হত্যার হুমকি দিয়েছে। বিষয়টি থানায় লিখিতভাবে জানিয়েছেন তিনি। তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।