প্রকাশের সময় 24/08/2024
মিরপুরে দলের এক সুধী সমাবেশে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, কারও ওপর প্রতিশোধ নেবেন না। জামায়াত প্রতিশোধের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। তিনি বলেন, ‘তবে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে হবে। মূলত আমাদের দেশে সংখ্যাগুরু বা সংখ্যালঘু ইস্যু হচ্ছে সমাজকে শোষণ করার অন্যতম হাতিয়ার।’
শুক্রবার (২৩ আগস্ট) রাত সাড়ে ৮টায় রাজধানীর মিরপুরে গ্রান্ড প্রিন্স রেস্টুরেন্টে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত এক সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
শনিবার (২৪ আগস্ট) বিকালে গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানান ঢাকা মহানগর উত্তর জামায়াতের প্রচার-মিডিয়া সম্পাদক আতাউর রহমান সরকার।
আমির আরও বলেন, ‘আমরা ধর্ম, বর্ণ ও গোত্র নির্বিশেষে সবাই বাংলাদেশি। আমরা একই মায়ের সন্তান। তাই কোনোভাবেই সম্প্রীতি নষ্ট করা চলবে না। সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলতে হবে। আর কোনও ষড়যন্ত্রই সফল হতে দেওয়া যাবে না।’
‘মূলত ছাত্ররাই আগামীর বাংলাদেশ। তারাই আমাদের ভবিষ্যৎ। তাই শিক্ষার্থীদের কোনোভাবেই বিভ্রান্ত হওয়ার সুযোগ নেই।’ নতুন প্রজন্ম আগামী দিনের নেতৃত্ব গ্রহণের জন্য নিজেদেরকে প্রস্তুত করার আহ্বান জানান শফিকুর রহমান।
সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা মহানগর উত্তর জামায়াতের আমির মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী দেশকে কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা আমিরে জামায়াতের নির্দেশনায় অপশাসন, ঢাকা উত্তরকে দুঃশাসন চাঁদাবাজি ও দখলদারমুক্ত মানবিক এবং সম্প্রতির নগরী প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর। আর এজন্য আমরা নগরীতে অনেক জনহিতকর প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছি।’
তিনি এসব প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করেন।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগ এবং তাদের দোসররা দেশকে অঘোষিতভাবে ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করে করেছিল— যা ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে শুরু করে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত তা অব্যাহত ছিল। আওয়ামী নেত্রী জরুরি সরকারকে তাদের আন্দোলনের সফল হিসেবে দাবি করেছিলেন। কথিত এই জরুরি সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করে ৩ মাসের মধ্যে নির্বাচন দেওয়ার কথা বলে অবৈধভাবে ২ বছর পর্যন্ত তাদের ক্ষমতা প্রলম্বিত এবং তারা নিজেরাই ব্যাপকভাবে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছিল।’
‘আর এসব দুর্নীতি ও অনিয়মকে বৈধতা দেওয়ার প্রতিশ্রুতিতেই আওয়ামী- বাকশালীদের পরিকল্পিতভাবে ক্ষমতায় আনা হয়। এই ফ্যাসিবাদী শক্তি ক্ষমতায় এসে দেশপ্রেমী শক্তিকে বিশেষভাবে টার্গেট করে। সে ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতায় তারা কথিত বিচারের নামে দেশ বরেণ্য জাতীয় নেতাদের হত্যা করে।’
প্রসঙ্গত, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার যুদ্ধে আন্তর্জাতিক মানবতাবিরোধী অপরাধে যুক্ত থাকার কারণে জামায়াতের শীর্ষ কয়েকজন নেতার ফাঁসি, মৃত্যুদণ্ড ও কারাদণ্ড হয়েছে। সাজাপ্রাপ্ত অবস্থায় কোনও কোনও নেতা কারাগারেই মৃত্যুবরণ করেন। আলোচনায় জামায়াত আমির তার দলের শীর্ষ নেতাদের এই পরিস্থিতির বিষয়টি ইঙ্গিত করেন।
সদ্য ক্ষমতাহীন আওয়ামী লীগের উদ্দেশে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘তারা দেশের সব শ্রেণি ও পেশার মানুষকে নির্যাতন চালিয়ে দেশকে এক মাফিয়াতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল। তারা কথিত উন্নয়নের নামে দেশের টাকা বিদেশ পাচার করে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলে। বাকশালীরা সারা দেশে হত্যা, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, চাঁদাবাজি, জমি জবর দখল, টেন্ডারবাজিসহ দেশকে অপরাধ ও অপরাধীদের অভয়ারণ্যে পরিণত করে।’
তিনি এসব দুস্কৃতিকারীদের তালিকা প্রস্তুত করে জনসমক্ষে প্রকাশ করতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমানের পরিচালনায় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমির ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা। এতে বক্তব্য রাখেন অবসরপ্রাপ্ত সচিব মো. জাকির হোসেন আকন্দ, কাফরুল থানা বিএনপির আহ্বায়ক আকরাম বাবুল, মিরপুর কেন্দ্রীয় মন্দিরের সভাপতি তপনিমদ্রক নারায়ণ হোড় ও সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দেবচক্রবর্তী, মাওলানা ফয়সাল জালালী,মাওলানা লতিফ ফারুকী, মুফতি মুহাম্মদ উল্লাহ আনছারী, দক্ষিণ কাফরুল জামে মাসজিদের খতিব মাওলানা দেলোয়ার হোসেন, সম্মিলিত ইসলামী ঐক্যজোটের কো-চেয়ারম্যান মুফতি মাহবুবুর রহমান বিপ্লবী, বাংলাদেশ ব্যাপ্টিস্ট চার্চ সংঘের সিনিয়র পুরোহিত রেভারেন্ড মার্টিন অধিকারী।