প্রকাশের সময় 05/11/2024
দেশে গত মাসের চেয়ে অক্টোবর মাসে ধর্ষণ ও গণপিটুনির ঘটনা বেড়েছে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের মাসিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে, সেপ্টেম্বরে গণপিটুনির সংখ্যা ছিল ২০টি, অক্টোবর মাসে গণপিটুনি ঘটনা বেড়ে হয়েছে ২৬টি। এছাড়া, সেপ্টেম্বরের তুলনায় অক্টোবরে দেশে শিশু ধর্ষণ বৃদ্ধি পেয়েছে ৯১ দশমিক ৬৭ শতাংশ এবং নারী ধর্ষণ বৃদ্ধি পেয়েছে ৪৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ।
গৃহীত অভিযোগ ও তদন্ত প্রতিবেদন এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের বরাতে এসব কথা জানিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।
মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অক্টোবর মাসের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাসমূহ প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা গেছে, সেপ্টেম্বরে গণপিটুনির সংখ্যা ছিল ২০টি, অক্টোবর মাসে গণপিটুনির মোট ঘটনা ২৬টি। এতে নিহত হয়েছেন ১৮ জন এবং আহত হয়েছেন ৮ জন। অক্টোবরে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ২২ জন নারী ও ২৩ জন শিশু।
সেপ্টেম্বরের তুলনায় অক্টোবরে শিশুধর্ষণ বৃদ্ধি পেয়েছে ৯১.৬৭ শতাংশ; নারী ধর্ষণ বৃদ্ধি পেয়েছে ৪৬.৬৭ শতাংশ। এ ছাড়া, পূর্বশত্রুতা, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হয়রানি করতে মামলা দায়ের, দুষ্কৃতিকারীদের দ্বারা রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা ও সহিংসতার ঘটনা প্রকাশিত হয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে ৩০ অক্টোবর চুয়াডাঙ্গার দামুরহুদা উপজেলায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপি নেতা সুলতান, ৩ অক্টোবর গাইবান্ধায় আওয়ামী লীগের নেতা মোস্তাক আহমেদকে রাজনৈতিক শত্রুতার জের ধরে হত্যার তথ্য তুলে ধরা হয়। এ ছাড়া, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দায়েরকৃত মামলাগুলোতে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন দলীয় নেতাকর্মীসহ সাংবাদিক ও সাধারণ নাগরিকদের ঢালাওভাবে আসামি করার তথ্য তুলে ধরেছে মানবাধিকার কমিশন।
আরও পড়ুন
তবে, গত বছর অক্টোবর মাসে যেখানে কাঁচা মরিচের দাম ছিল ১২০০ টাকা কেজি, এ বছর অক্টোবরে দাম ছিল ৭০০ টাকা কেজি। গত মাসে ডিমের দাম ১৯০ টাকা ডজন পর্যন্ত উঠলেও অক্টোবরে সরকারের কঠোর মনিটরিংয়ের কারণে ডিমের দাম কমে ১৫০ টাকা ডজনে এসে স্থীত হয়েছে। লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির ফলে দেশের বেশিরভাগ খেটে খাওয়া, নিম্ন ও নির্ধারিত আয়ের মানুষ তাদের চাহিদা মেটাতে অক্ষম হয়ে পড়ে। ফলে মানুষ সুষম খাদ্যগ্রহণ এবং স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। তাই, বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের কঠোর নজরদারি অব্যাহত রাখা প্রয়োজন।
এ মাসেও চিকিৎসায় অবহেলায় রোগীর হয়রানির সংবাদ পাওয়া গেছে। শেরপুর সদর হাসপাতালে বিভিন্ন রোগের সমস্যা নিয়ে ভর্তি হওয়া রোগীদের ইনজেকশন দেওয়ার পর গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় কমপক্ষে ৩০ জন রোগী অসুস্থ হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে, অক্টোবরে অ্যান্টিবায়োটিক, ব্যথানাশক ট্যাবলেট, ভিটামিন, গ্যাস্ট্রিক ও ডায়াবেটিকের ওষুধসহ বিভিন্ন ধরনের ইনজেকশনের দাম বাড়িয়েছে কোম্পানিগুলো। ওষুধের দাম বেড়েছে সর্বনিম্ন ৫ শতাংশ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ পর্যন্ত।
সহিংসতার বাস্তব অবস্থা অনুসন্ধান-নিরূপণে মানবাধিকারের কমিটি
শিশু ধর্ষণ: অক্টোবর মাসে শিশু ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ২৩টি। যার মধ্যে মামলা হয়েছে ১৮টি অর্থাৎ মামলার শতকরা হার ৭৮.২৬। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি শিশু ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। মোট ধর্ষণের ঘটনার ৩৯.১৩ শতাংশ ঘটনা ঘটেছে ঢাকায়। শিশু ধর্ষণের মোট ঘটনার ৭৩.৯১ শতাংশ ঘটনা ঘটেছে ঢাকা এবং চট্টগ্রাম বিভাগে।
সংখ্যালঘু নির্যাতন: অক্টোবর মাসে মোট সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ৩৫টি। তার মধ্যে ২৩টি ঘটনার মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। সংখ্যালঘু নির্যাতনের ধরণগুলো সাধারণত সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রতিমা ও উপাসনালয় ভাঙচুর, বাড়িতে হামলা ও লুটপাট, চাঁদাদাবি, পূজার সরকারি বরাদ্দ আত্মসাৎ, পূজামণ্ডপে চুরি ও পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ, শারীরিক নির্যাতন ও মন্দিরের জমি দখল ইত্যাদি। অন্যদিকে, কিছু স্থানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পোস্টকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের চেষ্টা করা হয়েছে।
নারীর প্রতি সহিংসতা, ধর্ষণ, যৌন নির্যাতন ও পারিবারিক সহিংসতা: অক্টোবর মাসে নারী ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ২২টি, যৌন নির্যাতন ১৪টি, পারিবারিক সহিংসতা ৪৩টি এবং নারীর প্রতি সহিংসতার ৬৮টি ঘটনা ঘটেছে। এখানে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, পারিবারিক সহিংসতার মাত্র ১১টি ঘটনায় এবং নারীর প্রতি সহিংসতার ১৪টি ঘটনায় মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। পারিবারিক সহিংসতার উল্লেখযোগ্য ধরণগুলো হলো- শারীরিক নির্যাতন, বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া, গর্ভপাত ঘটানো, গায়ে অগ্নিসংযোগ, বিষ প্রয়োগ ও শ্বাসরোধ ইত্যাদি। অন্যদিকে, যৌতুকের জন্য নির্যাতন ও হত্যা, স্ত্রীর বিনা অনুমতিতে আরেকটি বিয়ে করার কারণে পারিবারিক কলহ থেকে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে।
শিশু নির্যাতন: শিশু নির্যাতনের ২৩টি ঘটনার মধ্যে মাত্র ১১টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। সামাজিক সম্মানের কথা চিন্তা করে অনেকেই ঘটনার বিষয় চেপে যান। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, নির্যাতনকারী নিকট আত্মীয়দের মধ্যে কেউ তাই ঘটনার বিষয়ে আইনগত প্রতিকার চায় না সংশ্লিষ্ট পরিবার। শিশু নির্যাতনের বিভাগ অনুযায়ী সংখ্যাতাত্ত্বিক তথ্য নিয়ে দেওয়া হলো:
সাংবাদিক নির্যাতন: অক্টোবর মাসের সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনাগুলো খেয়াল করলে দেখা যায়, সাংবাদিকের ওপর হামলা, তাদের নামে মামলা, গ্রেপ্তার বা আটক, পরিবারের সদস্যদের লাঞ্ছিত করা ও বাড়িঘর ভাঙচুর করা।
বিভাগ অনুযায়ী অক্টোবর মাসে সাংবাদিক নির্যাতনের মোট ঘটনা ২৬টি। ঢাকা ২, চট্টগ্রাম ৯, খুলনা ১, বরিশাল ২, রাজশাহী ১, রংপুর ৩, সিলেট ৬ ও ময়মনসিংহ ১।
বেড়েছে গণপিটুনি: ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে গণপিটুনিতে হত্যার সংখ্যা তুলনামূলক বেড়েছে। অক্টোবর মাসে মোট ২৬টি গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে। এতে ১৮ জন নিহত এবং ৮ জন আহত হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে সন্দেহের বশে প্রাণে মেরে ফেলার মতো ঘটনা ঘটেছে।
শ্রমিক মৃত্যু: অক্টোবর মাসে শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনা পাওয়া গেছে ৪টি। সেপ্টেম্বর মাসে যার সংখ্যা ছিল ১৪টি। অক্টোবর মাসে যে ৪টি শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনা পাওয়া গেছে তা ঢাকা এবং চট্টগ্রাম বিভাগে সীমাবদ্ধ। ঢাকা বিভাগে ৩ জন শ্রমিক মারা যান এবং চট্টগ্রাম বিভাগে ১ জন।
হেফাজতে মৃত্যু: এ মাসে কারা হেফাজতে ৫ জনের মৃত্যুর ঘটনা পাওয়া গেছে। ঘটনাগুলো খেয়াল করলে দেখা যায়, প্রায় সব ক্ষেত্রে কারা কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, কয়েদি অসুস্থবোধ করায় তারা হাসপাতালে নিয়ে গেলে আসামির মৃত্যু হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ: আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে ৩৩টি অভিযোগ পাওয়া গেছে গত অক্টোবর মাসে। যৌতুক ও নারী নির্যাতন, মামলা নিতে অনীহা, ডাকাতি ও লুটপাট, মামলা গ্রহণে উৎকোচ দাবি, কার্যালয়ে অপেশাদার আচরণ, ক্রসফায়ারের হুমকি ও শারীরিক নির্যাতন, ছিনতাই, আন্দোলনরত গার্মেন্টস শ্রমিকদের ওপর গুলিবর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডে সহযোগিতাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ। তবে এসব ক্ষেত্রে ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষ মামলা করতে পারে না বললেই চলে। অক্টোবর মাসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে ৩৩টি অভিযোগের মধ্যে মাত্র ৭টি ঘটনায় মামলা দা