প্রকাশের সময় 11/01/2025
গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে বৃহত্তর বাণিজ্যিক মিতালি মার্কেটের চারশতাধিক দোকান মালিক সঙ্গবদ্ধ চাঁদাবাজ চক্রের চাঁদাবাজি, হামলা, লুট ও দোকান বেদখলের আশংকায় আতংকে দিনাতপাত করছে। সঙ্গবদ্ধ ওই চাঁদাবাজ চক্রের দোকান প্রতি দাবিকৃত ৫ লাখ টাকা করে চাঁদা না দেয়ায় দোকানগুলো দখল করে লুটপাটের হুমকি ও হামলা অব্যাহত রয়েছে বলে অভিযোগ করছেন ব্যবসায়ী মহল।
তাদের দাবি ওই চাঁদাবাজ চক্র মিতালি মার্কেটের ৮, ৯ ও ১৩ নং ভবনের চার শতাধিক দোকান মালিকদের কাছে দোকান প্রতি ৫ লাখ টাকা করে ২০ কোটি টাকা চাঁদা হাতিয়ে নিয়ে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছেন। চাঁদাবাজ চক্র ওই চাঁদার টাকা হাতিয়ে নিতে বিভিন্নভাবে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করায় তারা নিরব ভুমিকা পালন করছেন।
যার ফলে তাদের বিরুদ্ধে আদালতে পৃথকভাবে পাঁচটি চাঁদাবাজির মামলাসহ সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ও বিভিন্ন প্রশাসনিক দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেও মুক্তি পাচ্ছেন না তারা। সবশেষে বাধ্য হয়ে চাঁদাবাজ চক্রের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করায় বর্তমানে জীবন ঝুঁকিতে রয়েছে ব্যবসায়ী মহল।
জানাগেছে, সিদ্ধিরগঞ্জের সাহেবপাড়া এলাকায় মিতালি মার্কেটে মোট ১৩টি ভবনে ৬ হাজারের অধিক দোকান রয়েছে। মার্কেটের প্রতিষ্ঠাতা রফিকুল ইসলাম এসব দোকানের পজিশন বিক্রি করেন। পরে মার্কেট চালু হওয়ার পর পজিশন মালিকরা বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের কাছে তাদের দোকান ভাড়া দেন।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মিতালি মার্কেটের ৮, ৯ ও ১৩ নং ভবনের চার শতাধিক দোকান মালিকদের কাছে দোকান প্রতি ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন কমর আলী তার ছেলে মাসুদ ও বাদশা ও তার বাহিনী।
চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় তারা বিএনপি নামধারী বহিরাগত কয়েক শতাধিক সন্ত্রাসী নিয়ে মার্কেটের তিনটি ভবন তাদের নিয়ন্ত্রনে নিয়ে নেন। এরপর থেকে জোর করে দোকানের ভাড়া নিয়ে যাচ্ছে ওই চাঁদাবাজ চক্র। ভাড়া না দেয়ায় অনেককে মারধর, হামলা ও লুটপাটের শিকার হতে হয়েছে।
একটি দোকানের মালিক আব্দুল মান্নান বলেন, মাসুদ ও বাদশা ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে আমরা দোকন মালিকরা সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশের কাছে অভিযোগ করেও আইনি সহায়তা পাইনি। ফলে নিরুপায় হয়ে ৫ জন দোকান মালিক বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জ আদালতে পৃথক পাঁচটি চাঁদাবাজির মামলা করি। মামলা করার পর থেকে চাঁদাবাজ সন্ত্রাসীরা আমাদের হুমকি ধামকি দিচ্ছে।
আরেক দোকান মালিক ইমরান হোসেন বলেন, আদালতে মামলা ও থানা পুলিশসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেও প্রতিকার পাচ্ছিনা। ফলে চাঁদাবাদের বিচারের দাবিতে গত ৯ জানুয়ারি দুপুরে দোকান মালিকরা মার্কেটে বিক্ষোভ মিছিল করি। এসময় চাঁদাবাজরা আমাদের ধাওয়া দিলে আমরা মার্কেটে আশ্রয় নেই।
তখন তারা মার্কেটের সবগুলো প্রবেশ পথ বন্ধকরে তালা লাগিয়ে আমাদের আটকিয়ে রাখে। পরে সরকারি জুরুরি সেবা ৯৯৯ নাইনে ফোন করলে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ গিয়ে আমাদের উদ্ধার করেন।
এ ঘটনা দোকান মালিক আব্দুল মান্নান বাদী হয়ে মৃত আক্কাস আলীর ছেলে কমর আলী, তার ছেলে বাদশা, মাসুম ও ম্যানেজার রানার নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ৫০-৬০ জনের বিরুদ্ধে রাতে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় নতুন আরেকটি লিখিত অভিযোগ করেন।
চাঁদা দাবির অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্ত মাসুম বলেন, পেষিশক্তি প্রয়োগ করে রফিকুল ইসলাম জোর করে আমাদের জমি দখল করে এসব ভবন নির্মাণ করেন। আমরা আমাদের জমি বুজে নিয়েছি। তাই আমাদের জমিতে নির্মিত মার্কেট ভবনও আমাদের। রফিকুল ইসলামের কাছ থেকে যারা পজিশন কিনেছে তারা অবৈধ মালিক।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি শাহীনুর আলম বলেন, আগে একপক্ষ মার্কেটের দখলে ছিলেন। ৫ আগস্টের পর আরেক পক্ষ কমর আলী মার্কেটের জমি তাদের দাবি করে আসছে। কমর আলী পক্ষ জমির মালিক দাবি করছেন আর আব্দুল মান্নানগং সমিতির কাছ থেকে পশিজন কিনে দোকানের মালিক দাবি করছেন। ৯ তারিখে দোকান মালিকদের আটকিয়ে রাখার খবর পেয়ে পুলিশ পাঠিয়ে তাদের উদ্ধার করি। এ ঘটনায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ হয়েছে।