
প্রকাশের সময় 13/04/2025
লিয়াকত হোসাইন:
চাঁদপুরের মতলব উত্তরে সন্তানদের ভরণপোষণ আর ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে বিপাকে দিনযাপন করছে সাথী আক্তার। সে মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল ইউনিয়নের উত্তর ইমামপুর গ্রামের আসাদ প্রধানের মেয়ে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাথী আক্তারের সাথে একই গ্রামের আব্দুর রহমান প্রধানের ছেলে মো. রানা প্রধানের সাথে ২০১২ সালের জুন মাসের ৬ তারিখে ইসলামিয়া শরীয়া মোতাবেক বিবাহ হয়। বিবাহের পর কয়েক বছর দাম্পত্য জীবন ভালোই চলে। ২০১৪ সালে তাদের জমজ সন্তান হয়। তাদের নাম ফাহমিদা ও ফাহাদ। বর্তমানে তাদের বয়স ১১ বছর।
আরো জানা যায়, জমজ সন্তান ও স্ত্রী নিয়ে সংসার চালাতে হিমসিম খায় মো. রানা। তখন সাথী আক্তারের স্বামী, শশুর, শাশুরী, দেবর, ঝাঁ এবং ভাসুর কন্যাসহ সবাই সাথীর সাথে খারাপ আচরণ করতে থাকে। পরে দফায় দফায় লক্ষ্য লক্ষ্য টাকা দেয় সাথীর বাবা। তারপরও সেখানে সাথী ভালো ভাবে বসবসা করতে না পারায় সাথীর বাবা আসাদ প্রধান সাথীর নামে নিজ বাড়ির ৫ শতাংশ জমি লিখে দেয়। পরে সাথী তার স্বামী ও সন্তান নিয়ে এখানে বসবাস করে রানা বিদেশে চলে যায়। ছুটিতে এসে ঐ যায়গায় সুকৌশলে মো. রানা প্রধান তার নামে লিখে নেয় এবং একটি অভিজাত দালান তৈরি করে। দালান তৈরি করতে সাথীর বাবার কাছ থেকে সাড়ে ৮ লাখ টাকা হাওলাদ নেয় এবং এনজিও থেকে ২২ লাখ টাকা ঋন করে রানা বিদেশে চলে যায়। সেখানে গিয়ে রানা স্ত্রী সন্তানের ভরনপোষণ না দিয়ে সাথীর ভাবীকে সুকৌশলে বিদেশে (সৌদি আরব) নিয়ে রাজিয়াকে বিয়ে ফেলে। এখন সন্তানদের ভরনপোষণ ও লেখাপড়ার খরচ ও ঋনের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় মানবেতর জীবন যাপন করছে।
এ বিষয়ে প্রতিকার পাওয়ার জন্য স্থানীয়ভাবে কয়েকবার মিমাংসার জন্য বসলে রানার বাবা-মা বিষয়টি এড়িয়ে চলে। কোন প্রতিকার না পেয়ে সাথী আক্তার মতলব উত্তর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। তবে অভিযোগের পরিপেক্ষিতে পুলিশ কোন ব্যাবস্থা না নিলে হতাশ সাথী আক্তার ও তার পরিবার।
সাথী আক্তারের ভাই মো. রাজন জানান, আমার বোনের সুখের জন্য, আমার বোনের জামাই মো. রানার অনেক অত্যাচার সহ্য করেছি। আমার বাবা আমার বোনের নামে আমাদের বাড়ির মধ্যে ৫ শতাংশ জায়গা লিখে দিয়েছে। সেই জায়গাটিও আমার বোনের কাছ থেকে তার স্বামী লিখে নিয়েছে । সেই জায়গায়ই রানা বহু টাকা ঋণ নিয়ে একটি দালান নির্মাণ করেন। পরে সে বিদেশে চলে গিয়ে একটি নর্তকীকে বিয়ে করেছে। এখন তিনি আমার বোন এবং ভাগিনা ভাগ্নিদের কোন খোঁজ খবর নেয় না। লোনের টাকাও পরিশোধ করে না। এ বিষয়ে স্থানীয়ভাবে কয়েকবার আমরা বসেছি কিন্তু কোন প্রতিকার না পেয়ে মতলব উত্তর থানায় অভিযোগ করেছিলাম। পরবর্তীতে থানা পুলিশ ৭ মাস আমাদেরকে ঘুরিয়ে কোন রকমের সহযোগিতা করেনি। বরং উল্টো আমাদেরকে থানা থেকে বের করে দিয়েছেন পুলিশ।
রজিয়ার ছেলে মো. রিফাত (১৮) জানান, আমি যখন ছোট ছিলাম। তখন আমার কুলাঙ্গার মা আমাকে এবং আমার বাবাকে ছেড়ে অন্য লোকের সাথে পালিয়ে গিয়েছে। তখন আমাকে কোলে পিঠে করে মানুষ করেছেন আমার ফুফু সাথী আক্তার। আমার কুলাঙ্গার মা পরবর্তীতে গাজীপুরের আরেকটি লোককে বিয়ে করেন। সেখানেও তিনি ক্ষান্ত হননি। তিনি আমার ফুফা রানাকে প্রলোভন দেখিয়ে বিদেশে গিয়ে বিয়ে করেন। এই কুলাঙ্গার মহিলা আমার ফুফুর সংসারটা ও ধ্বংস করে দিয়েছে। তাকে আমার মা বলতো লজ্জা হয়, সে মা জাতির কলঙ্ক। তার মতন এমন কুলাঙ্গার মা আর যাতে কারো না হয়। আমি এই কুলাঙ্গার মহিলার বিচার চাচ্ছি।
এ বিষয়ে সাথী বলেন, আমি থানায় গিয়ে অভিযোগ করেছি। কিন্তু পুলিশ কেন ব্যবস্থা নেয়নি। উল্টো আমাকে থানা থেকে বের করে দিয়েছে পুলিশ। আমি আমার সঠিক বিচারের দাবিতে বিভিন্ন জায়গায় দ্বারস্থ হয়ে বিচার পাইনি। আমি এখন কি করবো বুঝতে পারতেছি না। আমার ভাইদের থেকেও আমি অনেক টাকা এনে ঋণ দিয়েছে। ভাইয়েরা আর কত দিবে।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী সাথী আক্তার আরো বলেন, একদিকে সন্তানদের ভরনপোষণ আর অন্যদিকে ঋনের বোঝা মাথায় নিয়ে বিপাকে আছি। কোথায়ও বিচার না পেয়ে আমি হতাশ। আত্মহত্যা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না আমার।
অভিযুক্ত রানা প্রধানের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে মোবাইল ফোনে সংযোগ পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে মতলব উত্তর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. রবিউল হক বলেন, নারীর ভরনপোষণ না দিলে সেটি নারী শিশু পারিবারিক আইনে কোর্টে মামলা করতে হবে।